মাসুদ আলম: রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ধ্বংসস্তুূপ থেকে বুধবার আরও দুজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। বিকেল পৌনে পাঁচটায়  দুজনের লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তারা হলেন মমিন উদ্দিন সুমন (৪৪) ও রবিন হোসেন শান্ত (২০)। এ নিয়ে এ বিস্ফোরণের ঘটনায় মোট ১৯ জন নিহত হন। বিস্ফোরণে নিহত ১৭টি মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায়  আরও একজন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া ২০ জন  ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দগ্ধ ১০ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার বিকেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। 

ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের বেজমেন্টের বদ্ধ কোনো কক্ষে গ্যাস জমে সেটি ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছিল। সেখানে যেকোনো উপায়ে স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) হওয়ার পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। এদিকে ভবনটির মালিকসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার সকালেও ফের উদ্ধার কার্যক্রম চালায় ফায়ার সার্ভিস । ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা। ভবনটি ৪৫ বছর আগের পুরোনো বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে সরকারি ছুটির দিন থাকায় এখনো ভবনের কাগজপত্র খুঁজে পায়নি সংস্থাটি।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) আক্তারুজ্জামান বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি তিনজন নিখোঁজ। এরমধ্যে দুজনেই মরদেহ উদ্ধার করেছি। আরও একজন নিখোঁজ বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ভবন ও দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে নিখোঁজদের উদ্ধারে চেষ্টা চালানো হবে।

ডিএমপির সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভবনের আবদ্ধ কক্ষে গ্যাস জমেছিল। সেখানে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট বা অন্য কোনো উপায়ে স্পার্ক থেকে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে। কোনো বিস্ফোরক বা আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) সার্কিটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

বুধবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মঙ্গলবার  দুর্ঘটনায় আমাদের এখানে ১১ জন রোগী ছিল, তার মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেলে ট্রান্সফার করা হয়েছে, তার বার্ন নেই। যে ১০ জন আছে তার মধ্যে তিনজন আইসিইউতে, দুজন লাইফ সাপোর্টে। বাকিরা আছেন এইচডিইউতে। চিকিৎসাধীন ১০ জনের কেউই শঙ্কামুক্ত নন। কারো শরীরের ৮০ শতাংশ, কারো ৯০ শতাংশ, কারো ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আমরা কাউকে শঙ্কামুক্ত বলতে পারবো না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ঢামেক হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন আইসিইউতে আছেন। বাকিদের অবস্থা উন্নতির দিকে। বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত শতাধিক ব্যক্তি হাসপাতালে আসেন। অধিকাংশ ব্যক্তিকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে ১৩টি লাশ আসে এবং ৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জমে থাকা গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ। ফায়ার সার্ভিসের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব